যে আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে সে যেন জবানের হেফাজত করে-১

Daily Inqilab মাওলানা মুহাম্মাদ ফজলুল বারী

১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৮ এএম | আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৮ এএম

জবানের দ্বারা মানুষ অনেক বড় বড় গুনাহে লিপ্ত হয়। জবান আমলের খাতাকে কলুষিত করে। কিয়ামতের দিন এই জবানই মানুষের মহা বিপদের কারণ হবে। জবানের দ্বারা সংঘটিত গুনাহের মধ্যে গিবতেই মানুষ সবচেয়ে বেশি লিপ্ত হয়। কম মানুষই এ থেকে বাঁচতে পারে। এ ব্যাপারে অবহেলার অন্ত নেই। জেনে না জেনে, বুঝে না বুঝে গিবত করতে থাকে। সকালে গিবত করে, বিকালে গিবত করে, রাতে গিবত করে; গিবতই যেন কারো কারো সারাদিনের একমাত্র কাজ। ক’জন একত্র হলে প্রথম কাজ যেন গীবত।

এটা মানুষের সমাজে শত ফ্যাসাদের কারণ। স্বয়ং আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারীমে এ ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। এর নিকৃষ্টতা ব্যক্ত করেছেন- নিজের মৃত ভাইয়ের গোস্ত ভক্ষণের সাথে তুলনার মাধ্যমেÑ ‘হে মুমিনগণ! তোমরা অধিকাংশ অনুমান থেকে বেঁচে থাকো। কারণ, কোনো কোনো অনুমান গুনাহ। তোমরা কারো গোপন ত্রæটির অনুসন্ধানে পড়বে না এবং একে অন্যের গিবত করবে না। তোমাদের মধ্যে কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে? এটাকে তো তোমরা ঘৃণা করে থাকো। তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।’ (সূরা হুজুরাত, ১২)

গিবত সম্বন্ধে আরো বহু বর্ণনা রয়েছে। গিবত থেকে বাঁচার জন্য আজ শুধু এতোটুকু জেনে নিই- গিবত ও পরনিন্দার শাস্তি কতো কঠিন। নবীজী (সা.) বলেন, মে‘রাজের সময় আমি কিছু লোকের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলাম, যাদের ছিল তামার নখ। সেই নখ দিয়ে তারা নিজেদের চেহারা এবং বুক ক্ষত-বিক্ষত করছিল। আমি বললাম, জিবরীল! এরা কারা? উত্তরে তিনি বললেন, যারা (দুনিয়াতে) মানুষের গোশত খেত (গিবত করতো) এবং মানুষের সম্মানহানি করতো। (সুনানে আবু দাউদ, ৪৮৭৮)

সামাজিক ফাসাদের ক্ষেত্রে পরনিন্দা আরো মারাত্মক। পরনিন্দা বলা হয় : বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উদ্দেশে একের দোষ অন্যের কানে লাগানো। পরনিন্দাকারী অন্যকে লাঞ্ছিত করতে গিয়ে একসময় নিজে লাঞ্ছিত হয়; যখন মানুষ তার আসল উদ্দেশ্য জেনে যায়। আল্লাহ তাআলা কুরআনে এ স্বভাবের নিন্দা করে বলেনÑ ‘দুর্ভোগ প্রত্যেক ওই ব্যক্তির, যে পেছনে ও সামনে মানুষের নিন্দা করে।’ (সূরা হুমাযাহ, ১) আর পরনিন্দাকারীর পরিণাম বড় ভয়াবহ। নবীজী (সা.) বলেন, পরনিন্দাকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (সহিহ মুসলিম, ১০৫)

মিথ্যা সব পাপের মূল। মুনাফিকের স্বভাব। মুমিন মিথ্যা বলতে পারে না। যে এই বিশ্বাস রাখে যে, আল্লাহর সামনে আমাকে দাঁড়াতে হবে, সে মিথ্যা বলতে পারে না। কবীরা গুনাহের সবচেয়ে বড় কবীরা গুনাহগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো মিথ্যা। নবীজী (সা.) একবার সাহাবিগণকে বললেন, আমি কি তোমাদের সবচেয়ে বড় কবিরা গুনাহসমূহের কথা বলে দিবো?

সাহাবীগণ বললেন, অবশ্যই বলুন আল্লাহর রাসূল! তখন নবীজী বললেন, আল্লাহর সাথে শিরক করা। মাতা পিতার অবাধ্য হওয়া। (এতটুকু বলা পর্যন্ত নবীজী হেলান দেয়া অবস্থায় ছিলেন) এরপর নবীজী হেলান দেয়া থেকে সোজা হয়ে উঠে বসলেন, বললেন, আরে ভালো করে শুনে রাখ! (বড় কবীরা গুনাহের অন্যতম হলো,) মিথ্যা বলা, মিথ্যা বলা, মিথ্যা বলা। নবীজী অতি গুরুত্বের সাথে এ বাক্য বারবার বলতে লাগলেন। এ দেখে আমরা (মনে মনে) বলে উঠলাম, (নবীজীর তো কষ্ট হচ্ছে!) নবীজী যদি একটু চুপ করতেন! (সহিহ বুখারি, ২৬৫৪)

মিথ্যার পরিণাম জাহান্নাম। দুনিয়ার পরিণাম হলো লাঞ্ছনা। কারণ, মিথ্যা গোপন থাকে না; কোনো না কোনোদিন প্রকাশ পেয়েই যায়। একটি মিথ্যা দশটি মিথ্যা টেনে আনে, পাপের বোঝা বাড়াতেই থাকে। একপর্যায়ে মিথ্যার জাল থেকে বের হওয়া কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। সুতরাং সাময়িক ও বাহ্যিক ক্ষতি বা শাস্তি মেনে নিয়ে হলেও মিথ্যা থেকে একশ হাত দূরে! নবীজী (সা.) বলেন, তোমরা মিথ্যা থেকে দূরে থাকো। নিশ্চয় মিথ্যা পাপের পথে নিয়ে যায়। আর পাপ জাহান্নামে নিয়ে ফেলে। যে ব্যক্তি মিথ্যা বলতেই থাকে, মিথ্যার খোঁজে থাকে; একপর্যায়ে আল্লাহর খাতায় ‘কায্যাব’ (মহা মিথ্যাবাদী) হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়ে যায়। (সহিহ বুখারি, ৬০৯৪)

মুমিন কখনোই মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে পারে না। মুমিনের গুণের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে এই গুণের কথা আল্লাহ কুরআনে বলেছেনÑ যারা মিথ্যা সাক্ষী দেয় না। (সূরা ফুরকান, ৭২)


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

ইসলাম শান্তির ধর্ম কেন ও কীভাবে-১
বিনয় : মুমিনের এক অপরিহার্য গুণ-২
বিনয় : মুমিনের এক অপরিহার্য গুণ-১
যে আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে সে যেন জবানের হেফাজত করে-২
একটি হাদিস ও জীবন পরিবর্তনকারী চারটি কথা
আরও
Airtel Wecome Banner

আরও পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্র ও লন্ডনে ৩শ’ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে হাসিনা-জয়ের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু

যুক্তরাষ্ট্র ও লন্ডনে ৩শ’ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে হাসিনা-জয়ের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু

রাজশাহী মহানগরীতে ঘন কুয়াশা

রাজশাহী মহানগরীতে ঘন কুয়াশা

আবারও  ভানুয়াতুতে  দ্বীপপুঞ্জে ৬.২ মাত্রার ভূমিকম্প

আবারও ভানুয়াতুতে দ্বীপপুঞ্জে ৬.২ মাত্রার ভূমিকম্প

হাজীগঞ্জে ভরাট মিঠানিয়া খালের মুখ, হুমকিতে ফসলি জমি

হাজীগঞ্জে ভরাট মিঠানিয়া খালের মুখ, হুমকিতে ফসলি জমি

রাহাতের সুরের মুর্ছনায় বিমোহিত দর্শক, বাংলায় বললেন 'আমরা তোমাদের ভালোবাসি'

রাহাতের সুরের মুর্ছনায় বিমোহিত দর্শক, বাংলায় বললেন 'আমরা তোমাদের ভালোবাসি'

‘প্রশাসন ক্যাডার নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে’

‘প্রশাসন ক্যাডার নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে’

যুক্তরাজ্যে ট্রাম্পের বিশেষ দূত হিসেবে মার্ক বার্নেট নিযুক্ত

যুক্তরাজ্যে ট্রাম্পের বিশেষ দূত হিসেবে মার্ক বার্নেট নিযুক্ত

ফাইনালে ভারতের কাছে বাংলাদেশের হার

ফাইনালে ভারতের কাছে বাংলাদেশের হার

ফ্রেন্ডলি ফায়ার দুর্ঘটনায় লোহিত সাগরে মার্কিন যুদ্ধবিমান ধ্বংস

ফ্রেন্ডলি ফায়ার দুর্ঘটনায় লোহিত সাগরে মার্কিন যুদ্ধবিমান ধ্বংস

ইরানে যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে নিহত ১০

ইরানে যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে নিহত ১০

বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারী কে, জানেন?

বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারী কে, জানেন?

বাংলাদেশি রোগী পেতে সীমান্ত পর্যন্ত মেট্রো চালু করবে ভারত

বাংলাদেশি রোগী পেতে সীমান্ত পর্যন্ত মেট্রো চালু করবে ভারত

হাত ফসকে আইফোন পড়ে গেল মন্দিরের দানবাক্সে, ফেরত দিতে অস্বীকৃতি

হাত ফসকে আইফোন পড়ে গেল মন্দিরের দানবাক্সে, ফেরত দিতে অস্বীকৃতি

কুয়াশায় ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে একাধিক দুর্ঘটনা: নিহত ১, আহত ১৫

কুয়াশায় ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে একাধিক দুর্ঘটনা: নিহত ১, আহত ১৫

ঢাকার বায়ুমানে উন্নতির কোনো লক্ষণ নেই, বিপজ্জনকের কাছাকাছি

ঢাকার বায়ুমানে উন্নতির কোনো লক্ষণ নেই, বিপজ্জনকের কাছাকাছি

উগ্রবাদী সন্ত্রাসী 'সাদ' পন্থীদের কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন

উগ্রবাদী সন্ত্রাসী 'সাদ' পন্থীদের কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন

বাংলাদেশ সীমান্তে অত্যাধুনিক ড্রোন মোতায়েন ভারতের

বাংলাদেশ সীমান্তে অত্যাধুনিক ড্রোন মোতায়েন ভারতের

নরসিংদীতে দুর্বৃত্তের গুলিতে ছাত্রদলকর্মী নিহত

নরসিংদীতে দুর্বৃত্তের গুলিতে ছাত্রদলকর্মী নিহত

সিনেটে প্রার্থী হতে সরে দাঁড়ালেন লারা ট্রাম্প

সিনেটে প্রার্থী হতে সরে দাঁড়ালেন লারা ট্রাম্প

আমাদেরকে আর স্বৈরাচার হতে দিয়েন না : পার্থ

আমাদেরকে আর স্বৈরাচার হতে দিয়েন না : পার্থ